বাল্যবিবাহ ও কৈশোরে মাতৃত্ব রুখতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ পদক্ষেপ।

নানুর , মুনতাজ রহমান(বাপি) : বাল্যবিবাহ এবং কৈশোরে গর্ভধারণের মতো সামাজিক ও স্বাস্থ্য সমস্যা রুখতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। বৃহস্পতিবার, নানুর ব্লকের পাপুড়ি হাই মাদ্রাসায় এক স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করা হয়, যার মূল আয়োজক ছিল নানুর গ্রামীণ হাসপাতাল। ছাত্রী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এই শিবিরে বাল্যবিবাহ, অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নানুর ব্লকে বাল্যবিবাহের হার প্রায় ১৭ শতাংশ। এই হার জেলার গড় হারের তুলনায় অনেক বেশি এবং তা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কৈশোরে গর্ভধারণের ফলে মেয়েদের মধ্যে অপুষ্টি, প্রসবকালীন জটিলতা, শিশুমৃত্যুর সম্ভাবনা এবং দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, বাল্যবিবাহের প্রবণতা কমাতে কেবল আইন প্রয়োগ নয়, প্রয়োজন সচেতনতা ও সামাজিক উদ্যোগ।

এই শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফাইজুল হক ওরফে কাজল সেখ, নানুরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সন্দীপ সিংহ রায়, নানুর ব্লকের বিএমওএইচ ডা. শংকর দাস, নানুর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কৃষ্ণ গোপাল মাঝি, পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ অখিলবন্ধু পাল সহ স্বাস্থ্য ও প্রশাসনের অন্যান্য প্রতিনিধিরা।
সভাধিপতি কাজল সেখ বলেন, “বাল্যবিবাহ একমাত্র সামাজিক অনুশাসনের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব। প্রশাসনের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হওয়া খুব জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকেও এই বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে।”

শিবিরে কৈশোরকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ আলোচনা করেন ডা. শংকর দাস। তিনি বলেন, “১৩ থেকে ১৯ বছর বয়স মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শরীর ও মনের গঠনের ক্ষেত্রে যেমন যত্নের প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন যথাযথ পুষ্টি ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।”
নানুরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সন্দীপ সিংহ রায় বলেন এই ধরনের সচেতনতামূলক শিবির নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনে নানুর ব্লকে বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব হবে।
শুধু বাল্যবিবাহ বা কৈশোরে গর্ভধারণ নয়, শিবিরে মানসিক স্বাস্থ্য, পতঙ্গবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক নিয়েও আলোচনা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কীভাবে নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে, কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে—তা শেখানো হয় নানা উদাহরণ ও উপস্থাপনার মাধ্যমে।