বোলপুর, দেবশ্রী মজুমদার : টুরিস্ট লজ মোড় থেকে চৌরাস্তা হয়ে জামবুনি বাসস্ট্যান্ড মোড়ে রবি ঠাকুরের গলায় মাল্য দান করে কার্যত কেন্দ্রের বাঙালি বিরোধীতার বিরুদ্ধে সরব হলেন জননেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রায় দেড় কিমি পথ মানুষের সাথে মিছিল করে হাঁটেন জননেত্রী। সকলের হাতেই ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড ভাষা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই। বাংলার সম্মান বাঙালি আত্মসম্মান। এদিন মিছিলে হাঁটেন বোলপুর ও বীরভূম লোকসভার দুই সাংসদ অসিত মাল ও শতাব্দী রায়। বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সৌগত সামন্ত, অধ্যাপক অতনু শাসমল, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের ছেলে সুদৃপ্ত ঠাকুর, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মী গগন সরকার, শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়, অসক গুণ, লেখক গীতিকণ্ঠ মজুমদার প্রমূখ। মঞ্চে প্রত্যেকেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। দূরে হুড খোলা গাড়িতে অনুব্রত মণ্ডল দাঁড়িয়ে বক্তব্য শোনেন। সামনে পিছনে এত মানুষের ভিড় যে তার গাড়ি শেষ পর্যন্ত মঞ্চে পৌঁছাতেই পারেনি।

মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা অবদান এবং বাঙালির অবদান তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আবুল কালাম আজাদ স্বামী বিবেকানন্দ, রাজা রামমোহন রায় ক্ষুদিরাম বোস, বিপিনচন্দ্র পাল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস কোন বাঙালি বাদ যাননি। তিনি বলেন, এই বাংলা থেকেই বিশ্ব বরেণ্য রবি ঠাকুরের লেখা গান ভারতের জাতীয় সংগীত, বঙ্কিম চট্টোপাধ্যায়ের লেখা জাতীয় স্তোত্র। এই বাংলাকে অবহেলা করা যাবে না।কেন্দ্রে গুজরাটি বসে বাংলায় বিভেদ আনতে পারবে না। গুজরাটিদের আমি ভালোবাসি। কিন্তু যেভাবে কেন্দ্র বাঙালিদের অপমান করছে তা সহ্য করা যায় না। শুধু আমরা নই, আন্তর্জাতিক মানব অধিকার কমিশনও এর বিরুদ্ধে সড়ক হচ্ছে। তারপর হিন্দি ভাষীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার ভালো লাগলো আপনারাও এই ভাষা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। আপনারাও অন্যান্য রাজ্যে আপনাদের আত্মীয়দের মাধ্যমে এই বিভেদ কামিদার বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। বোলপুর সেই রবীন্দ্রনাথের মাটি। যিনি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিভাগের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিমের হাতে রাখি বন্ধনের মাধ্যমে প্রতিবাদের সামিল হন। সবাই তাঁর গানে প্রতিবাদ করেন, বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান। নজরুল বলেন, হিন্দু না মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন? বল সন্তান মোর মার
সোমবার গণ মিছিলের পর মঞ্চে উঠে মহারাষ্ট্রে পরিযায়ী শ্রমিক খুনের ঘটনায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এদেশ আমার না, এ দেশ আমি দেখিনি, আমার দেশ মহান। তিনি বলেন,
মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়ে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক আবু বক্কর মণ্ডল (৩৩) খুন হন।

তার দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তায় পুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল জলে। সেই পরিযায়ী শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ ফেরে গ্রামের বাড়িতে। কী তার অপরাধ? শুধু বাংলা বলতে বলেই। এ গভীর চক্রান্ত। আমি নাম করব না। একজন তো বলছে বাংলাতেই দেড় কোটি নাম্বার যাবে। আমি বলি এটা কি আপনার বাপের জমিদারি। যদি জমিদারি কারো থাকে সেটা জনগণের। যদি একজনের নাম বাদ যায় তাহলে আমি ছেড়ে কথা বলব না। টাচ করোগে তো চুর চুর হো জায়েগা। কথায় কথায় রোহিঙ্গা। আরে ভাই, জাতিসংঘ ১০ লাখ রিফিউজি রোহিঙ্গার কথা বলেছে। সেটা বেড়ে ১৭ লক্ষ হতে পারে। দেড় কোটি কোথা থেকে আসে। হরিয়ানা রাজস্থান মহারাষ্ট্র সর্বত্র বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কেন হবে ? বাংলা ভাষায় কথা বললেই দোষ? আমাদের রাজ্যে তো বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে। এটাই তো বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। এদিন মুখ্যমন্ত্রী আপামর জনসাধারণকে এই ভাষা কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে রাস্তায় নামতে বলেন। তিনি বলেন বাংলায় বেঁচে থাকতে আমি এনআরসি হতে দেব না। বোলপুরের মাটিতে আমি এই আন্দোলন শুরু করে গেলাম। আপনারা এই আন্দোলন চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিন। এভাবে বাঙালিকে ভাগ করে বাঙালির শক্তিকে ক্ষয় করা যাবে না।। নির্বাচন কমিশন বলছে, রেশন কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, দলিল কোনটাই অস্তিত্ব প্রমাণের নথি নয়। আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে তো? কোথায় যাবেন? দুবাই যাচ্ছেন, আবুধাবি যাচ্ছেন, মালদ্বীপ যাচ্ছেন। সেখানে মুসলিম নেতাদের জড়িয়ে ধরছেন, কই একবারও তো ভাবছেন না যে তারা মুসলিম। সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা দান করছেন। আর বাংলাকে বঞ্চিত করছেন। আমাদের হাতে শঙ্খ আছে মুখে উলুদ ধ্বনি, আছে, কোন অস্ত্র নেই। মা বোনেরা রান্না করেন হাতে হাতা খুন্তি থাকে। তাহলে খেলাটা হয়ে যাক। পারবেন তো?
এভাবেই কার্যত কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালিদের উপর বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচার এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে লঙ্ঘিত করার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের মাটিতে এসেই সেই আন্দোলনের সূচনা করে গেলেন। পাশে পেলেন সাধারণ মানুষ ও সিভিল সোসাইটি।