১৯২৮-এ কবিগুরুর হাত ধরে শুরু, আজও শ্রীনিকেতনে সেই ঐতিহ্যবাহী হালচালনা হলকর্ষণ উৎসব।
১৯২৮-এ কবিগুরুর হাত ধরে শুরু, আজও শ্রীনিকেতনে সেই ঐতিহ্যবাহী হালচালনা হলকর্ষণ উৎসব।
শান্তিনিকেতন, দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায় : শ্রীনিকেতনে আজ অনুষ্ঠিত হলো বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী হলকর্ষণ উৎসব। কৃষক ও কৃষিকাজের মর্যাদা রক্ষায় এবং কৃষিতে নতুন দিশা আনতে ১৯২৮ সালের ১৫ জুলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সূচনা করেছিলেন। প্রথমে এর নাম ছিল ‘সীতাযজ্ঞ’। সেই দিন কবিগুরু নিজ হাতে প্রথম হাল চালনা করে অনুষ্ঠানটির শুভ সূচনা করেন।
হলকর্ষণ উৎসবের পেছনে ছিল কবিগুরুর গভীর দৃষ্টিভঙ্গি। তিনি বিশ্বাস করতেন, গ্রামের অর্থনীতি ও সমাজের উন্নতি কৃষকের উন্নতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কেবল প্রথাগত কৃষি পদ্ধতিতে উন্নয়ন সম্ভব নয়—তাই কৃষির সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যুক্ত করার আহ্বান জানান। এ উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কৃষি ও উদ্যানবিদ্যা শিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠান। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি কৃষিশিক্ষা, পশুপালন, হস্তশিল্প, এবং গ্রামীণ উন্নয়নকে এক সূত্রে বেঁধে দিয়েছিলেন।
আজকের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অসম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক প্রবীর কুমার ঘোষ। “ফিরে চল মাটির টানে” আবহে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কবিগুরুর লেখা থেকে পাঠ, গান ও নৃত্যের মাধ্যমে, যা প্রাঙ্গণ জুড়ে বয়ে আনে এক নস্টালজিক আবহ।

অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকজনের হাতে গাছের চারা বিতরণ করা হয় এবং সফল কৃষকদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। সমাপনী পর্বে প্রতীকী হালচালনা করেন অধ্যাপক অমরনাথ মুখোপাধ্যায়, উপাচার্য অধ্যাপক প্রবীণ কুমার ঘোষ ও স্থানীয় এক কৃষক, যা কবিগুরুর সূচিত ঐতিহ্যের প্রতীকী পুনরাবৃত্তি।
অধ্যাপক অমরনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “কৃষির উন্নতি ও কৃষকের উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়—রবীন্দ্রনাথ বহু বছর আগেই এই কথা ভেবে রেখেছিলেন। সেই ভাবনা আজও অনুপ্রেরণাদায়ক।”
উপাচার্য অধ্যাপক প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, “শ্রীনিকেতন নিয়ে কবিগুরুর যে স্বপ্ন ছিল, তা সার্থক রূপ দিতে বিশ্বভারতী বদ্ধপরিকর।” তিনি ভবিষ্যতে কৃষি শিক্ষা ও গ্রামীণ উন্নয়নকে আরও গতিশীল করার পরিকল্পনাও সকলের সামনে তুলে ধরেন।
বিস্তারিত খবর দেখতে ইউটিউবের লিংক নিচে দেওয়া আছে।