সিয়ান মাহালীপাড়ায় করম পূজা: ঐতিহ্যের টানে আদিবাসী সমাজ
সিয়ান মাহালীপাড়ায় করম পূজা: ঐতিহ্যের টানে আদিবাসী সমাজ

বোলপুর, দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায় : বোলপুর লাগোয়া নানুর বিধানসভার সিয়ান মাহালীপাড়ায় পালিত হলো আদিবাসী সমাজের অন্যতম পবিত্র উৎসব করম পূজা। গীতাঞ্জলি মাহালী ঝুমুর নৃত্য কেন্দ্রের উদ্যোগে, শ্রদ্ধা ও প্রাচীন রীতিনীতি মেনে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব।
করম পূজা প্রকৃতি, ভ্রাতৃত্ব, সমাজের সংহতি ও ফসলের ঋতুচক্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা এক আদিবাসী উৎসব। ভাদ্র মাসের একাদশীতে এই পূজা পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয়—করম দেবতা সমাজকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেন এবং কল্যাণ বয়ে আনেন। এদিন করম গাছের ডাল এনে পূজা করা হয়। যুবতীরা উপবাস করে প্রার্থনা করেন ভাইদের দীর্ঘায়ুর জন্য, আবার ভাইয়েরা প্রতিশ্রুতি দেন বোনদের সুরক্ষার।
লোককথা অনুযায়ী, একসময় কয়েকজন ভাই মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেরি করায় তাদের বোন রাগে খাবার ফেলে দেন। এতে অভিশাপগ্রস্ত হন ভাইয়েরা। তখন গ্রামবাসী করম গাছের ডাল এনে পূজা করেন এবং দেবতার কৃপায় অভিশাপ দূর হয়। সেই থেকে শুরু হয় করম পূজা।

করম গাছকে উর্বরতা, শক্তি ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক ধরা হয়। তাই করম পূজা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং সামাজিক সংহতি ও পারিবারিক বন্ধনের উৎসব।
করম পূজার দিন গ্রামে গ্রামে ধামসা-মাদলের তালে ঝুমুর নাচ, করম গান ও প্রার্থনায় মুখরিত হয় চারদিক। সমাজজীবনের মিলন ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়াই এই উৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
এ বছর সিয়ান মাহালীপাড়ায় করম পূজা বিশেষভাবে আয়োজন করে গীতাঞ্জলি মাহালী ঝুমুর নৃত্য কেন্দ্র। সংগঠনের সম্পাদক দোলন মাহালী জানান, “আমাদের মূল লক্ষ্য নিজেদের কৃষ্টি ও কালচারকে বাঁচিয়ে রাখা। যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরাও এই চিরাচরিত প্রথা শিখে বড় হতে পারে।”

আধুনিকতার চাপে আদিবাসী সংস্কৃতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে সিয়াল মাহালীপাড়ার মতো উদ্যোগই প্রমাণ করছে—সমবেত প্রচেষ্টায় এখনও ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আগলে রাখা সম্ভব। করম পূজা তাই শুধু পূজা নয়, বরং আদিবাসী সমাজের ঐক্য ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রতীক।
বিস্তারিত খবর দেখতে ইউটিউবের লিংক নিচে দেওয়া আছে।