বীরভূম, আমার খবর : শাল, কোপাই ও কুঁয়ে নদীর জল স্ফীতিতে বীরভূমের কিছু জায়গাই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলেও, আপাতত তা নিয়ন্ত্রণে। বীরভূম জেলা প্রশাসন সর্বদা সচেষ্ট।
শাল নদীর জলে ইলামবাজারের কিছু জায়গা, কোপাই নদীর জলে বোলপুর কঙ্কালীতলায় জল ওঠে। যদিও তার জন্য দেবীকে অন্যত্র সরাতে হয় নি। বোলপুর বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস জানান, এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। গতকাল হিংলো জলাধার থেকে ১০,০৮৮ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে একটু জলস্ফীতি হয়েছিল। এখন সেটি কমে তিনহাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের নজর আছে।
লাভপুরের ঠিবা অঞ্চলের জয়চন্দ্রপুর, হলিপুর, খাঁপুর, কাঁন্দরকুলা, চতুর্ভূজপুরের অবস্থা খারাপ। জয়চন্দ্রপুরের বাসিন্দা কল্যাণ ঘোষ জানান, চারিদিকে জলবন্দী অবস্থা। ইতিমধ্যেই কিছু মানুষ ত্রান শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসন যোগাযোগ রেখেছে। তবে এখনো পর্যন্ত নৌকার ব্যবস্থা হয়নি। এর ফলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। গতকাল এলাকার এক প্রসূতিকে দূরের করায় চাপিয়ে লাঙ্গল হাঁটা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। তারপর সেখান থেকে বোলপুর সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজকে প্রসুতির সন্তান হয়েছে। গুড়ের করায় খুব বিপদজনক। যেকোনো সময় করায় জল ঢুকে ডুবিয়ে দিতে পারে। মানুষ অসহায়। গ্রামে পুরনো নৌকা অকেজো হয়ে গেছে। অন্যদিকে ছেলে পুলেরা স্কুলে যেতে পারছে না। পাশের গ্রাম জামনা বা কীর্ণাহারে স্কুল আছে। এখন সব বন্ধ। চাষবাসের অবস্থা ভালো না। এলাকার ৩০টি মৌজার ধানের বিচন নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যা নেমে গেলেও সেখানে চাষাবাদ করা যাবে না। যুধিষ্ঠির বাগদি জানান, সরকার থেকে একটা উঁচু জায়গা করে দিয়েছে সেখানে আমরা উঠে থাকি। গতবার বন্যায় খেতে পাইনি। এবার কি হবে জানিনা। আকাশ হলে জল উঠলে আমরা কী করবো?
উল্লেখ্য, ইলামবাজারের সেতু সম্পূর্ণ জলের তলায় চলে গেল। যার ফলে গোল্ডে ও ইলামবাজারে সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । কারণ যেভাবে জল বাড়ছে তাতে যে কোন মুহূর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে তার জন্যে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।

একইভাবে, লাভপুরের ঠিবা অঞ্চলের জয়চন্দ্র পুর , হরিপুর, চতুর্ভুজপুর জলবন্দী। বেরোত পারছো না গ্রামবাসীরা।নিম্নচাপের জেরে টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের জ্বের, কুঁয়ে নদীর জল ছাপিয়ে প্লাবন অবস্থা বীরভূমের লাভপুর ব্লকের ঠিবা অঞ্চলের একাধিক গ্রাম। স্থানীয় গ্রামবাসী অষ্টম ঘোষ এবং উত্তম মন্ডলেরা জানান, ঠিবা গ্রাম থেকে কাঁদরকুলে যাওয়ার কুঁয়ে নদীর উপরে থাকা কজওয়ে জলের তলায়। জীবনে ঝুঁকির পারাপার করছে মানুষজন। কাঁদরকুলে, চতুর্ভুজপুর, হরিপুর, খাঁপুর সহ একাধিক গ্রামের মধ্যে কিছুটা জল ঢুকছে। প্লাবনের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে অসংখ্য গ্রামবাসীদের। নজরদারিতে রয়েছেন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। তবে গ্রামবাসীদের দাবি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত নৌকার ব্যবস্থা করা হয়নি যদি নৌকার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে এমনকি সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে।
জেলা সভাধিপতি ফাইজুল হক ওরফে কাজল শেখ কঙ্কালীতলা সতীপিঠ পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, জল নেমে গেছে। হিন্দু পুণ্যার্থীরা তাদের পূজা কর্ম করতে পারবেন। কোন সমস্যা নেই। বিডিও সাহেব ওখানে আছেন। তিনি সবকিছু নজর রাখছেন। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে মানুষের কি করার আছে? তবে জেলা প্রশাসন সর্বদা মানুষের পাশে আছে। যে দু একটি মাটির বাড়ি বৃষ্টির জলে ভেঙেছে। তার জন্য ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। এটুকুই বলবো, এই বাড়ি কয়টি মাটির থাকতো না। যদি কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনা কে আঁটকে না দিতো।