জেলার খবর
Trending

‘সাইরেন’ আর শোনাই যায় না, তবে এবার ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবে ফিরবে আমোদপুরের জৌলুস?

আমোদপুর, মুনতাজ রহমান : একটা সময় ছিল, যখন আমোদপুরের চিনির কলে সকাল সকাল সাইরেন বাজলেই ঘুম ভাঙত এলাকার মানুষের। সকালের কুয়াশা ভেদ করে হাজার হাজার শ্রমিকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠত গোটা মিল চত্বর। গাড়ি, সাইকেল, পায়ে হেঁটে ছুটে যেতেন কর্মীরা। কিন্তু কালের স্রোতে সবই হারিয়ে গিয়েছিল। মিল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ২০০৩ সালে। এরপর ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ে গোটা অঞ্চল। সেই বন্ধ মিল আবার নতুন করে আলোচনায়—এবার শিল্প সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে।

সম্প্রতি বীরভূম সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, আমোদপুরে একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গড়ে তোলা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আনন্দে ফেটে পড়েছে গোটা এলাকা। বন্ধ কলকারখানার রূপান্তর হওয়ার এই সম্ভাবনাই যেন নতুন করে প্রাণ জুগিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

আমোদপুর চিনিকলের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই মিল একসময় দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম বড় সুগার প্রসেসিং ইউনিট ছিল। আশপাশের বহু গ্রামের কৃষকেরা আখ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কর্মসংস্থান হতো স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের। প্রায় এক হাজারেরও বেশি পরিবার এই মিলের উপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল ছিল। ২০০৩ সালে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরও ২০০৬ সাল পর্যন্ত কিছু স্টাফকে বেতন দেওয়া হত, কিন্তু পরে পুরোপুরি তালা পড়ে যায় মিলের গেটে। ২০১০ সালে সম্পূর্ণ মিল এলাকা নিলামে বিক্রি হয়ে যায় এক বেসরকারি সংস্থার কাছে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে গোটা অঞ্চল।

স্থানীয় বাসিন্দা পার্থ রায় বলেন, এতদিন শিল্প বলতে কিছুই ছিল না এখানে। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা আমাদের জন্য নতুন ভরসা এনে দিয়েছে।”

এলাকার আরেক বাসিন্দা লালু শেখ বলেন, “আমার বাবা মিলের কর্মী ছিলেন। মাসে আড়াই হাজার টাকা পেতেন, তখন সেটা যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এখন সেই অনুপাতে পেনশন পান মাত্র ৮০০ টাকা। এতে সংসার চালানো দুষ্কর। “মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে খুব ভালো লেগেছে। যদি এখানে কারখানা হয়, তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। গোটা এলাকাই উন্নত হবে।”

শুধু শিল্প নয়, এই মিল সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি পূজাস্থলও—জটাধারী বাবার আশ্রম। বছরভর ভক্তদের যাতায়াত থাকে, আর প্রতিবছর বসে এক বিশেষ মেলা। এবার সেই মেলার প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। তৈরি হচ্ছে প্যান্ডেল, আসছে দোকানদাররা। শিল্প ও সংস্কৃতির এক সহাবস্থান যেন গড়ে উঠছে নতুন করে।

অনেকেই বলছেন, এই ঘোষণা বাস্তবায়িত হলে আমোদপুর শুধু একটি শিল্পাঞ্চল নয়, বীরভূম জেলার অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি নতুন পরিচিতি পাবে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি কীভাবে পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার।

বিস্তারিত খবর দেখতে ইউটিউবের লিংক নিচে দেওয়া আছে।

Related Articles

Back to top button