তালপাতার সেপাই নিছকই একটি খেলনা, তা নয়। এ এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প

বোলপুর, তালপাতার সেপাই নিছকই একটি খেলনা, তা নয়। এ এক ঐতিহ্যবাহী শিল্প। আর কার্যত হারিয়ে যেতে বসা এই খেলনা শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন শান্তিনিকেতনের অদূরে রায়পুরে গ্রামের শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস৷ বর্তমানে অত্যাধুনিক মোবাইল, ভিডিও গেমের যুগেও বিশেষত গ্রামাঞ্চলের মেলায় তালপাতার সেপাই দেখলেই চোখ যায় শিশুদের৷
এছাড়া, ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসাবেও ব্যবহৃত হয় প্রাচীন এই খেলনাটি৷

এটি একটি প্রাচীন খেলনা৷ শুকনো তালপাতা দিয়ে তৈরি। একদিকে পুরুষ ও একদিকে মহিলার অবয়ব।মেম ও সাহেব বলেও অবিহিত। বিশেষ করে পাড়া-গ্রামে শিশুদের চিত্তাকর্ষক এই খেলনা৷ তবে এটিকে নিছক একটা খেলনা বলা যায় না৷ এটি এক অনন্য শিল্প৷ তালপাতার সেপাই হল এক স্মৃতিকথা, এক উপন্যাস, এক সাহিত্য৷ যা ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ একদা, গ্রামীণ মেলাগুলিতে, অথবা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরেও ফেরিওয়ালারা বিক্রি করতেন তালপাতার সেপাই।
শপিং মল, খেলনা হাউস প্রভৃতি অত্যাধুনিক বহুজাতিক সংস্থায় খেলনায় ছড়াছড়ি। হারিয়ে যাওয়া হারিয়ে যেতে বসা খেলনা গুলো থেকে দূরত্ব বাড়ছে শিশুদের৷ সেই জায়গায় তালপাতার সেপাই আজও প্রাসঙ্গিক।
অজয় নদের তীরে বর্ধিঞ্চু রায়পুর গ্রাম৷ একদা এই গ্রামের সিংহ পরিবারের কাছ থেকেই জমি পেয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ সেই জমিতেই গড়ে উঠেছে শান্তিনিকেতন। যা আজ ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’।
এই গ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ দাস আজও এই ঐতিহ্যবাহী খেলনা শিল্পকে ধরে রেখেছেন৷ তাঁর হাত ধরে অনেকেই শিখেছেন।
কাঁচা তালপাতা প্রথমে কিছুটা শুকিয়ে নিতে হয়৷ সেই শুকনো তালপাতা জলে ভিজিয়ে কাঁচি দিয়ে মানব দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ন্যায় কাটতে হয়৷

শিল্পী গৌরাঙ্গ দাস জানান, তালপাতার সেপাই হল ২২ টি খণ্ডে বিভক্ত, ১৪ টি সেলাই ও ২৮ টি গিট থাকে৷ ১ কাঠির উপর একদিকে পুরুষ ও একদিকে মহিলার মুখ রঙ দিয়ে আঁকা হয়। কাঁঠিটি হাত দিয়ে ঘোরাকেই হাত-পা নাড়িয়ে মানুষের অবয়ব গুলি নড়াচড়া করে৷ যা দেখতে অনবদ্য৷ আর খেলনা শিশুমনকে আকৃষ্ট করে৷
একটি তালপাতার সেপাই বানাতে কমপক্ষে ৩০ মিনিট লাগে৷ তবে একসঙ্গে অনেকগুলো ভাগে কাজ হলে সময় কিছুটা বাঁচে৷ একটি তালপাতার সেপাইয়ের দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত৷
দীর্ঘ দিন ধরে তালপাতার সেপাই বানাচ্ছেন তিনি৷ তাঁর হাত ধরে শিখেছেন বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার অনেক শিল্পী৷ বর্তমানে তিনি একটি বহুজাতিক সংস্থা থেকে প্রায় দেড় লক্ষ তালপাতার সেপাই বানানোর বরাত পেয়েছেন৷ জোর কদমে চলছে তারই কাজ৷ তাঁর স্ত্রী মল্লিকা দাসও স্বামীর কাছ থেকে শিখে ২০০৬ সাল থেকে তালপাতার সেপাই বানাচ্ছেন৷

এই তালপাতার সেপাই নিয়ে শিল্পী নিজেই শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি খোয়াই হাটে বিক্রি করেন৷ এছাড়া, কখনও পৌষমেলা, জয়দেব মেলাতেও বিক্রি করতে যান৷ তাছাড়া বিশ্ব বাংলা হাট, কলকাতা, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি প্রভৃতি জায়গায় শিল্প প্রদর্শনী বা মেলার জন্যও তালপাতার সেপাইয়ের বরাত মেলে৷
বিস্তারিত খবর দেখতে ইউটিউবের লিংক নিচে দেওয়া আছে।